কলকাতার শুরুতে যেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল সেটা হল খাবার জল। কলকাতার এখানে সেখানে তখন পুকুরই ছিল জলের একমাত্র উৎস। কিন্তু সেই সব পুকুরের জলে প্রায়ই দূষিত হয়ে উঠত। সাহেবরা তাই খাবার জলের জন্য চেষ্টা করতে লাগল। ১৭০৬ সালে কলকাতায় পাকাবাড়ি ছিল আটটা। কাঁচাবাড়ি ছিল আট হাজার। পুকুর ছিল সতেরটা। ১৭০৯ সালে লালদীঘি বা ট্যাঙ্ক স্কোয়ারকে ভাল করে কাটিয়ে সংস্কার করে কেল্লা আর কাছারির সাহেবেরা জলের ব্যবস্থা করে। তার আগে তারা জল খেত পুকুর আর গঙ্গা থেকে। শহর যত গড়ে উঠতে লাগল লোকসংখ্যা ততই বাড়তে লাগল। তাই শহরের নানা জায়গায় পুকুর কাটবার দায়িত্ব নিল শহর উন্নয়ন আর লটারি কমিটি। তৈরি হল কর্নওয়ালিশ স্কোয়ার বা হেদুয়া, ওয়েলিংটন স্কোয়ার বা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, কলেজ স্কোয়ার বা গোলদীঘি, ওয়েলেসলি স্কোয়ার বা গোল তালাও। তবে আদি পুকুর লালদীঘি। লালদীঘির জলকে তখন লোকে বলত সাহেব পুকুরের জল।
১৮২০ সালে চাঁদপাল ঘাটে একটা পাম্প বসানো হয়েছিল। সেখান থেকে খোলা নর্দমার মধ্য দিয়ে জল সরবরাহ হত ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রীট, চিৎপুর, লালবাজার, বৌবাজারে। কলকাতার লোকেরা তখন কলসী নিয়ে নর্দমা থেকে জল তুলে বাড়িতে নিয়ে যেত। এছাড়া ভিস্তিওয়ালারা বাড়ি বাড়ি জল বেচতে যেত। বাড়ির গিন্নীরা জল কেনার আগে জেনে নিতেন সেই জল সাহেব পুকুরের কিনা। কারণ লালদীঘির জলই তখন ছিল সবচেয়ে ভাল। এদিকে ভিস্তিওয়ালারা বেশির ভাগ সময়েই ধর্মতলার নর্দমার জল ভরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করত সাহেব পুকুরের জল বলে। সামান্য জল নিয়েও তখন জালিয়াতি চলত কলকাতায় ৷
১৮৪৮ সাল। কলকাতা তখন বেশ বড় হয়ে উঠেছে। কিন্তু ভাল জলের সমস্যা তখনো মেটেনি। আইন তৈরি হল কলকাতায় জল সরবরাহ নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা পলতা থেকে কলকাতায় জল সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলেন। কাজ শুরু হল। মাটির নীচে লোহার পাইপ বসল আর সেই পাইপ গেল ডালহৌসী স্কোয়ার, লালবাজার, ধর্মতলা, চৌরঙ্গিতে। পলতার ৭২০ একর জমিতে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা হল। এটা অবশ্য ১৮৬৭ সালের কথা। পলতার জল থিতিয়ে সেই জল এসে জমা হত টালা আর সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে। ১৮৭০ সালে নানা পরীক্ষার পর কলকাতায় জল সরবরাহ শুরু হয়। তখন দৈনিক ষাট লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ হত। কলকাতার লোকসংখ্যা তখন ছিল ৬ লক্ষ ৩২ হাজার। প্রতি হাজার গ্যালনে জল কর ছিল দশ টাকা। জল সরবরাহ শুরু হতেই কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় সিংহমুখওয়ালা কল বসে গেল। কল খুললেই জল। কলকাতার লোক অবাক হয়ে গেল।
পলতার পরিকল্পনা তৈরি করেন পৌরসভার সেক্রেটারি ডব্লু- সি. ক্লার্ক। এরপর ১৯০৯ সালে টালার জলের ট্যাঙ্ক তৈরির কাজ শুরু হয়। ১৯১১ সালের ১২ জানুয়ারি ট্যাঙ্ক তৈরি শেষ হয়। কিন্তু জল সরবরাহ শুরু হয় ১৬ মে থেকে। টালার ট্যাঙ্ক তৈরি করতে খরচ হয়েছিল তেইশ লক্ষ টাকা। এই ট্যাঙ্কে ৯০ লক্ষ গ্যালন জল ধরে। এরপর ১৯২৩ সালে টালা পলতা জলসরবরাহ পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল পনের বছর।
- সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment